দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ২৪ জন জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি থেকে প্রায় ৮১ বছর পর জাপানে পাঠানোর কাজ চলছে। জাপান থেকে আসা সাত সদস্যের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল এই দেহাবশেষ উত্তোলনের কাজ শুরু করেছে। উত্তোলিত দেহাবশেষের মধ্যে মাথার খুলি ও শরীরের বিভিন্ন হাড় পাওয়া যাচ্ছে। এক ২৮ বছর বয়সী তরুণ সৈনিকের মাথার খুলিতে বুলেটের ক্ষতচিহ্নও আবিষ্কৃত হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ময়নামতির এই ঐতিহাসিক সমাধিক্ষেত্রে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাপানি দলের নেতা ইনোওয়ে হাসোয়েকি এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, “এখানে সমাহিত ১৩টি দেশের ৭৩৭ জন সৈনিকের মধ্যে জাপানের রয়েছে ২৪ জন। আমরা এই ২৪ জনের দেহাবশেষ উত্তোলনের কাজ করছি এবং ২৪ নভেম্বরের মধ্যে তা সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের আন্তরিক সহযোগিতায় এই কার্যক্রম সফল হচ্ছে।”
বাংলাদেশ সরকারের সমর্থনে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে দেহাবশেষ উত্তোলন ও স্থানান্তরের কার্যক্রম চলছে। জাপানি দলটির সাত সদস্যের মধ্যে ছয়জন জাপানের এবং একজন মার্কিন নাগরিক। তাদের সহায়তা করছেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক।
কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশন দীর্ঘদিন ধরে ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে। এ সমাধিক্ষেত্রে ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত নিহত ৭৩৮ জন সেনাকে সমাহিত করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ৩৫৭, কানাডার ১২, অস্ট্রেলিয়ার ১২, নিউজিল্যান্ডের ৪, দক্ষিণ আফ্রিকার ১, অবিভক্ত ভারতের ১৭১ এবং জাপানের ২৪ জন সৈনিক রয়েছেন।
জানা যায়, ১৯৬২ সালে এক মার্কিন সৈনিকের দেহাবশেষ তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এবার জাপান ২৪ জনের দেহাবশেষ নিয়ে গেলে ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে ৭১৩ জন সৈনিকের দেহাবশেষ অবশিষ্ট থাকবে।
প্রতি বছর নভেম্বর মাসে কমনওয়েলথভুক্ত দেশের প্রতিনিধিরা এই সমাধিক্ষেত্রে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। চলতি বছরের ৯ নভেম্বরও ১৩ দেশের কূটনীতিকরা এই সমাধিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীর সৈনিকদের স্মরণ করেছেন।