ওমায়ের আহমেদ শাওন (লেখক, কলামিস্ট ও গণমাধ্যম বিশ্লেষক)
গণমাধ্যম মূলত, জনগনকে প্রভাবিত করার বড় শক্তি। জনগণের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমকেই আমরা গণমাধ্যম হিসেবে জানি। একে-অপরকে বার্তা পৌঁছে দেওয়া, খবরাখবর নেওয়া সহ দেশ, সমাজ, শিল্প-সংষ্কৃতির প্রতিফলন গণমাধ্যমের মাধ্যমেই প্রকাশ পায়। গণমাধ্যম বা মিডিয়া সাধারনত দুই প্রকার। যেমন- ক. ইলেকট্রনিক মিডিয়া খ. প্রিন্ট মিডিয়া। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মধ্যে রেডিও, টেলিভিশন, নাটক-চলচ্চিত্র প্রভৃতি মূখ্য গণমাধ্যম এবং মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া গৌণ গণমাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। অপরদিকে সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন মূখ্য গণমাধ্যম।
কথায় আছে, যা অক্সিজেনের ন্যায় নিরপেক্ষ, জলের ন্যায় সর্বত্রগামী এবং আলোর ন্যায় দ্রুতি সম্পন্ন সেটাই গণমাধ্যম। প্রকৃত গণমাধ্যম সত্য, বস্তুনিষ্ট এবং মানুষের কল্যানে নিবেদিত। সে গণমাধ্যম দলমত নির্বেশেষে সার্বজনীন ভাবে কাজ করে যায়। মানুষের জীবনযাত্রা, প্রকৃতি-পরিবেশ প্রভৃতি সকল কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। গণমাধ্যমে ভালো-মন্দ দুটোই বিস্তার লাভ করে। সৎ এবং অসৎ দুটো উদ্দেশ্যেই গণমাধ্যম আত্মপ্রকাশ করতে পারে। সে ব্যাপারে জনগণ খুব সহজেই তা অনুধাবন করতে পারে।
চলমান বিশ্বের নানান বিচিত্র ঘটনা, যুদ্ধ, রাজনীতি, আবিষ্কার, উদ্যোগ, সামাজিক ও অসামাজিক কর্মকান্ড গণমাধ্যমের জন্যই জানতে পারি। শিক্ষা বিস্তার ও জনমত গঠনে গণমাধ্যম প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। এর পাশাপাশি জনগণের বিভ্রান্তি দূরীকরণ, জনগনের মতামতকে প্রতিষ্ঠা, জনগনকে সচেতন ও আত্মপ্রত্যয়ী করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করে থাকে। কিন্তু গণমাধ্যম যদি কুসংষ্কার, ধর্মবিদ্বেষ, উগ্রতা-হিংস্রতা, অশ্লীলতা, নগ্নতা-নোংরামো ইত্যাদি সরাসরি অথবা কৌশলে প্রোমোট করে তাহলে মানুষের অভিরূচি ও মনোভাবে তা মারাত্মক ভাবে তার প্রভাব ফেলে। সে বিরূপ প্রভাব জাতি-সমাজ-বিশ্বের নীতি, নৈতিকতা, মানবিক মূল্যবোধ, মনুষ্যত্বকে বিঘ্নিত করে। ধর্ম ও সংষ্কৃতি ব্যতিত কোন জাতি বেঁচে থাকতে পারে না। বিভিন্ন দেশ ও জাতির কৃষ্টি-কালচার, আচার-আচরনের সচিত্র বর্ণনা প্রচারের মহৎ কাজটি করে জনগণের জনপ্রিয়তা অর্জন করতে হয়। কিন্তু মিথ্যাচার কল্প-কাহিনী, গুজব, বানোয়াট এবং আজগুবি উদ্ভট ঘটনা প্রচারের ফলে গণমাধ্যম ইন্টারনেট বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ার পেলেও বাস্তবিক পক্ষে গ্রহনযোগ্যতা হারায়। যেখানে জাতি গঠনে কাংখিত অবদান রাখা উচিত সেখানে রাজনীতির প্রকোপে মানুষের মাঝে বিভাজন তৈরী করে ফেলে। এজন্য সমাজ ও দেশ তথা বিশ্বের জন্য গ্রহনযোগ্য, নিরপেক্ষ এবং সার্বজনীন গণমাধ্যম অধিক পরিমাণে অতিব জরুরী।